বিশ্বে এ পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট স্পেসএক্সের স্টারশিপ উৎক্ষেপণের তিন মিনিট পরেই মাঝ আকাশে বিস্ফোরিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় রকেটটি বিস্ফোরিত হয়।

দক্ষিণ টেক্সাসের বোকা চিকায় ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্সের উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে সফলভাবেই যাত্রা করেছিল মনুষ্যবিহীন রকেটটি। তিন মিনিট ধরে আকাশে ওঠার পর এর বুস্টারটি পরিকল্পনামতো ওপরের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে ব্যর্থ হয়। তখনই মাঝ আকাশে ঘটে বিস্ফোরণ। এর আগে গত সোমবার রকেটটি প্রথম মনুষ্যবিহীন যাত্রা শুরু করতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে থেমে যায়। কথা ছিল এটি স্থানীয় সময় গত সোমবার সকালে মেক্সিকো উপসাগরের তীরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বোকাচিকা থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রকেটের ওপরের অংশটি পূর্ব দিকে যাবে এবং পুরো পৃথিবী একবার প্রদক্ষিণ করে সাগরে নেমে আসবে। প্রায় ১২০ মিটার বা ৪০০ ফুট উঁচু এই বিশালকায় রকেট তৈরি করেছে মার্কিন উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের স্পেসএক্স কম্পানি।

মানুষের তৈরি সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী এ রকেট উৎক্ষেপণের সময় যে ঊর্ধ্বমুখী চাপ বা ‘থ্রাস্ট’ তৈরি হবে, তার পরিমাণ এ পর্যন্ত যত রকেট তৈরি হয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু উৎক্ষেপণের কয়েক মিনিট আগে জানানো হয়, রকেটটি তরল গ্যাসের জ্বালানির সঠিক চাপ রক্ষা করে এমন একটি ভাল্ভ জমে গিয়েছে এবং ঠিকমতো কাজ করছে না। তাই কোনো রকম ঝুঁকি না নিয়ে উৎক্ষেপণ পেছানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইলন মাস্ক এক টুইট বার্তায় জানিয়েছিলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আবার রকেটি উৎক্ষেপণের চেষ্টা করা হবে।

অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে সফলভাবেই যাত্রা করে মনুষ্যবিহীন রকেটটি বিস্ফোরিত হয় রকেটটি। ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্টারশিপের উচ্চতা ৩৯৪ ফুট, যা স্ট্যাচু অব লিবার্টির চেয়েও ৯০ ফুট বেশি। ২০২৫ সালের মধ্যে নাসার তিন নভোচারীকে এই রকেটে করেই চাঁদে পাঠানোর কথা। স্পেসএক্স বলেছে, তাদের বিশেষজ্ঞরা এবারের উৎক্ষেপণের তথ্য বিশ্লেষণ করে পরবর্তী উক্ষপণের প্রস্তুতি নেবেন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইলন মাস্ক অবশ্য টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন তার কর্মীদের। তিনি বলেছেন, এবারের অভিজ্ঞতা থেকে তারা আগামী উেক্ষপণের জন্য অনেক কিছু শিখেছেন। আর পরবর্তী উৎক্ষেপণচেষ্টা হবে কয়েক মাসের মধ্যেই।

ইলন মাস্কের মতে, তিনি এমন রকেট তৈরি করেছেন যা মানুষ ও উপগ্রহকে প্রতিদিন কয়েকবার করে কক্ষপথে নিয়ে যাবে। ঠিক যেভাবে একটি জেট বিমান আটলান্টিকের প্রতিদিন যাত্রীদের এপারে-ওপারে আনা-নেওয়া করে। এই রকেট সিস্টেমকে বলা হচ্ছে, সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য । এর অর্থ হলো, এই সিস্টেমের প্রধান হার্ডওয়্যার অংশগুলো ফেলে দেওয়া হবে না বা রকেটের জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ার পর পুড়ে ছাই হয়ে যেতেও দেওয়া হবে না, যেমনটা সাধারণ রকেটের বেলায় হয়ে থাকে।

স্পেসএক্সের এই রকেটের সবচেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য হবে, এর প্রধান হার্ডওয়্যারগুলো মাটিতে ফিরে আসবে এবং তাদেরকে আবার ওড়ানো যাবে। শুধু তাই নয়, এই পুনর্ব্যবহার হবে ‘র‍্যাপিড’ বা দ্রুত। স্টারশিপে আবার রকেট জ্বালানি ভরা যাবে এবং অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই তা আবার উৎক্ষেপণের জন্য তৈরি হয়ে যাবে ঠিক বিমানের মতো। এর ফলে এই পুরো প্রকল্পের খরচও কমে যাবে।

রাকিব/এখন সময়